রসায়ন বিজ্ঞান কি ও কাকে বলে? রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা

রসায়ন বিজ্ঞান কি ও কাকে বলে? রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা
রসায়ন বিজ্ঞান কি ও কাকে বলে? রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা 

রসায়ন বিজ্ঞান কি ও কাকে বলে?

রসায়ন বিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা পদার্থের কাঠামো, উপাদান, ধর্ম ও পারস্পরিক ক্রিয়া বিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা সমূহের মধ্যে এই শাখাটি মূলত পদার্থ গঠনকারী উপাদানসমূহ নিয়ে কাজ করে। এসকল উপাদান কেমন আচরণ করে কিংবা অন্য উপাদানের উপস্থিতিতে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, এসকল বিষয়গুলিই রসায়নের মূল আলোচ্য বিষয়।

রসায়ন বিজ্ঞান প্রাথমিকভাবে অণু, পরমাণু এবং আয়ন সম্পর্কে গুরুত্ব দেয় এবং কিভাবে তারা মৌল ও যৌগ গঠন করে তার ধারণা দেয়। এসকল উপাদানগুলো মৌল বা যৌগ গঠনকালে যেভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়, বন্ধন গঠন করে বা পদার্থের অভ্যন্তরীন গঠনের পরিবর্তন করে সেসব কিছুই রসায়ন বিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়।

রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা

রসায়ন বিজ্ঞানের ৫ টি প্রধান শাখা রয়েছে। এগুলো হল:-

১। জৈব রসায়ন (Organic Chemistry)
২। অজৈব রসায়ন (Inorganic Chemistry)
৩। বিশ্লেষণী রসায়ন (Analytical Chemistry)
৪। ভৌত রসায়ন (Physical Chemistry)
৫। প্রাণরসায়ন (Biochemistry)


১। জৈব রসায়ন (Organic Chemistry)

জৈব রসায়ন হল রসায়নের একটি শাখা যা হাইড্রোকার্বন ও হাইড্রোকার্বনের জাতকসমূহের গঠন, ধর্ম, সংযুক্তি এবং প্রস্তুতি বা সংশ্লেষণ আলোচনা করে। এসব যৌগকে বলে জৈব যৌগ। সাধারণভাবে হাইড্রোকার্বন বলতে হাইড্রোজেন ও কার্বন সমৃদ্ধ জৈব যৌগ সমূহকে বোঝায়। 

জৈব রসায়নের সাথে সম্পর্কিত রসায়নের অন্যান্য শাখাসমূহ হল:-

Medicinal chemistry — চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহৃত ঔষধের গঠন, নকশা, বিকাশ এবং সংশ্লেষণ সম্পর্কে আলোচনা করে।

Organometallic chemistry — কার্বন এবং কোন ধাতুর মধ্যে বন্ধন যুক্ত রাসায়নিক যৌগসমূহকে নিয়ে আলোচনা করে।

Polymer chemistry — পলিমার নিয়ে আলোচনা করে।

Physical organic chemistry — জৈব অণুসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক ও গঠন নিয়ে আলোচনা করে।

Stereochemistry — অণুতে পরমাণুর স্থানিক বিন্যাস এবং পদার্থের রাসায়নিক এবং ভৌত বৈশিষ্ট্যের উপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।


২। অজৈব রসায়ন (Inorganic Chemistry)

অজৈব রসায়ন হ'ল অজৈব যৌগের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং আচরণের অধ্যয়ন। এটি জৈব যৌগ ব্যতীত সমস্ত রাসায়নিক যৌগকে নিয়ে আলোচনা করে। অজৈব রসায়নের উল্লেখযোগ্য বিষয় হল স্ফটিক কাঠামো, খনিজ পদার্থ, ধাতু, অনুঘটক এবং পর্যায় সারণি।

অজৈব রসায়নের সাথে সম্পর্কিত রসায়নের শাখাসমূহ হল:

Bioinorganic chemistry — জীবন্ত টিস্যুর সাথে ধাতব আয়নের মিথস্ক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।

Geochemistry — শিলা, খনিজ ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন ও পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে।

Nuclear chemistry — তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে আলোচনা করে।

Organometallic chemistry — কার্বন এবং কোন ধাতুর মধ্যে বন্ধন যুক্ত রাসায়নিক যৌগসমূহকে নিয়ে আলোচনা করে।

Solid-state chemistry — কঠিন পদার্থের সংশ্লেষণ, গঠন এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে।

৩। বিশ্লেষণী রসায়ন (Analytical Chemistry)

রসায়ন বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থের রাসায়নিক উপাদানগুলোর গুণগত এবং পরিমাণগত মান নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে বিশ্লেষণী রসায়ন বলা হয়। 

বিশ্লেষণী রসায়নের সাথে সম্পর্কিত রসায়নের অন্যান্য শাখাগুলো হল-

Forensic chemistry — অপরাধ অনুসন্ধানে বিভিন্ন রাসায়নিক মূলনীতি, কৌশল এবং পদ্ধতি ব্যাবহার নিয়ে আলোচনা করে।

Environmental chemistry — পরিবেশে ঘটে যাওয়া রাসায়নিক এবং জৈব রাসায়নিক ঘটনা সমূহ নিয়ে আলোচনা করে।

Bioanalytical Chemistry — নির্দিষ্ট ওষুধের উপস্থিতি শনাক্ত করতে রক্ত, প্রস্রাব, চুল, লালা এবং ঘামের মতো জৈবিক পদার্থ পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করে।

৪। ভৌত রসায়ন (Physical Chemistry)

ভৌত রসায়ন হল রসায়নের এমন একটি শাখা যেখানে পদার্থের ভৌত বৈশিষ্ট্যে রাসায়নিক কাঠামোর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। রসায়নের এই শাখায় সাধারণত রাসায়নিক বিক্রিয়ের হার, বিকিরণের সাথে অণুর মিথস্ক্রিয়া এবং গঠন ও ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়।

ভৌত রসায়নের সাথে সম্পর্কিত রসায়নের অন্যান্য শাখা গুলো  হল:-

Photochemistry — আলোর প্রভাবে পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে।

Surface chemistry — পদার্থের পৃষ্ঠে রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে যার মধ্যে রয়েছে শোষণ, ভিন্নধর্মী ক্যাটালাইসিস, কলয়েড গঠন, ক্ষয়, ইলেক্ট্রোড প্রসেস এবং ক্রোমাটোগ্রাফির মতো বিষয়।

Chemical kinetics — রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার এবং যে প্রভাবগুলো বিক্রিয়ার হারকে প্রভাবিত করে ও সামনের দিকে সেসব নিয়ে আলোচনা করে।

Quantum chemistry — সাব-এটমিক কণাসমূহের গতি এবং মিথস্ক্রিয়ার গাণিতিক বিবরণ নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়াও এটি শক্তির পরিমাণ, তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা, অনিশ্চয়তা নীতি এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সাথে এসবের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।

Spectroscopy — কোন পদার্থের অধ্যয়নে বা পদার্থটি যেসকল রাসায়নিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় সেসবের অধ্যয়নের ক্ষেত্রে পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের শোষণ, বিকিরণ বা বিচ্ছুরণ এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে।


৫। প্রাণরসায়ন (Biochemistry)

প্রাণ রসায়ন হ'ল জীবজন্তুতে ঘটা বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া সমূহের অধ্যয়ন। প্রাণরসায়ন জীবজন্তুতে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনাকে রসায়নের ভাষায় ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।

প্রাণরসায়নের সাথে সম্পর্কিত রসায়নের অন্যান্য শাখাগুলো হল:-

Molecular biology — ডিএনএ, আরএনএ এবং প্রোটিন সিনথেসিস এর মত কোষের বিভিন্ন সিস্টেমের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করে।

Genetics — জিন, বংশগতি এবং জীবের মধ্যে বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা করে

Pharmacology — ওষুধের কর্ম প্রক্রিয়া এবং জীবের উপর ওষুধের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। 

  • Toxicology — ফার্মাকোলজির একটি উপশাখা যা জীবের উপর বিষের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।

Clinical biochemistry — বিভিন্ন রোগের কারণে দেহের প্রাণ রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও গঠনে পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে।

Agricultural biochemistry — উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অণুজীবের ক্ষেত্রে যেসব রাসায়নিক ঘটনা ঘটে থাকে তা নিয়ে আলোচনা করে।

কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান 

References:

https://bn.wikipedia.org/wiki/chemistry 
What are the branches of chemistry and their definition?
https://leverageedu.com/blog/branches-of-chemistry/
https://byjus.com/chemistry/

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

If it seems any informative mistake in the post, you are cordially welcome to suggest fixing it.