মেঘের বিভিন্ন রং | Image by Flickr |
আকাশের নীল রং কাকে না টানে! সেই সাথে যদি থাকে তুলার মত ভাসতে থাকা সাদা সাদা মেঘ তাহলে তো কথাই নেই। আবার এমন দৃশ্যে আমরা অনেকেই বেরসিকের মত ভাবতে বসে যাই এই মেঘগুলো দেখতে এত সাদা হয় কেন?
আবার অন্যদিকে, ঝড় বা প্রবল বৃষ্টির পূর্বে আকাশে জমাট বাঁধা কালো বা ধূসর রং এর মেঘ যেন আগাম বার্তা দিয়ে যায়। মনে প্রশ্ন জাগে, এ সময় মেঘ এত ধূসর বা কালো হল কিভাবে?
মেঘের এমন ভিন্ন ভিন্ন রং ধারণ নিয়ে আমাদের মাঝে প্রচলিত অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে সেসব ছাপিয়ে চলুন দেখে নেওয়া যাক মেঘ দেখতে সাদা, কালো বা ধূসর হয় কেন।
মেঘের রং সাদা হওয়ার কারণ
সূর্যের আলো যখন মেঘের উপরের পৃষ্ঠে পড়ে তখন মেঘের ভাসমান জলকণার উপর আলোর বিক্ষেপণ ঘটে। আলোর বিক্ষেপণ এমন একটি আলোকীয় ঘটনা যেখানে আলোক রশ্মি কোন কিছুর সাথে বাঁধা পেয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে, ঠিক যে কারণে আকাশ নীল দেখায় কিংবা সমুদ্রের পানির রং নীল হয়ে থাকে।
আবার, আমরা জানি সূর্যের আলোর প্রতিফলন আমাদের কোন বস্তু দেখতে সাহায্য করে। আর এও জানি যে, সূর্যের আলো বা সাদা আলো সাত রং এর সমষ্টি। এই সাত রং এর আলোর রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য। যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম তার বিক্ষেপণ বেশি হয় এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হলে বিক্ষেপণ কম হয়। সূর্যের আলোর সাতটি রং এর মধ্যে নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য 400 ন্যানোমিটার যা সবচেয়ে ছোট এবং লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য 700 ন্যানোমিটার সবচেয়ে দীর্ঘ। খুবই ক্ষুদ্র কণা যেমন বাতাসের কণা সবচেয়ে ভালভাবে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর বিক্ষেপণ ঘটাতে পারে।
কিন্তু মেঘের জলকণা গুলো তুলনামূলক বড় হয়ে থাকে। এরা অতিক্ষুদ্র কণার মত নির্দিষ্ট কোন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর বিক্ষেপণ না ঘটিয়ে প্রায় সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর বিক্ষেপণ ঘটায়। অর্থাৎ সব রং এর আলোকে চারদিকে ছড়িয়ে দেয় যা আমাদের চোখে ধরা পড়ে। আর যেহেতু বিক্ষিপ্ত আলোতে সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোই থাকে, তাই তাদের সমষ্টি হিসেবে পুনরায় সাদা আলোই আমরা দেখে পাই। মেঘের ভেতর দিয়ে সূর্যের আলো ভেদ করার সময় আলোর এমন বিক্ষেপণের কারণেই আমরা মেঘ কে এমন ধবধবে সাদা দেখতে পাই।
মেঘের রং কালো বা ধূসর হওয়ার কারণ
এবার তাহলে আসা যাক মেঘ কালো হয় কেন তার উত্তরে। এ ঘটনাটি ঘটে মূলত মেঘের পুরুত্বের কারণে। একটি উদাহরণ কল্পনা করতে পারেন। অন্ধকার ঘরে একটি পাতলা কাগজের পৃষ্ঠের উপর টর্চ লাইট ধরলে নিচ থেকে কাগজের পৃষ্ঠ ভেদ করে আসা আলো দেখতে পাবেন। এবার পৃষ্ঠার সংখ্যা বাড়াতে থাকুন। দেখবেন কাগজ ভেদ করে আসা আলোর তীব্রতা কমতে শুরু করেছে। পুরুত্ব অনেক বেশি হয়ে গেলে দেখবেন আর কোন আলোই ভেদ করে আসছে না। অর্থাৎ যে পাশে টর্চ লাইট ধরেছেন তার অপর প্রান্ত সম্পূর্ণই অন্ধকার বা কালো। যদিও এই ঘটনার পেছনে আলোর বিক্ষেপণের তেমন কোন ভূমিকা নেই, কিন্তু ফলাফল বিবেচনায় যথেষ্ট মিল রয়েছে।
মেঘের উপরের স্তরে আলোর বিক্ষেপণ হলে একে সাদা দেখা যায়। আলো বিক্ষেপিত হতে হতে মেঘের ভেতর দিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু মেঘের পুরুত্ব অনেক বেশি হলে বা মেঘের স্তর সংখ্যা বেশি হলে আলো বিক্ষেপিত ও বাধাপ্রাপ্ত হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে মেঘের নিচের স্তর যা আমরা দেখতে পাই সেখানে আলো পৌঁছায় না বললেই চলে। যে কারণে মেঘের নিচের স্তরটি ধূসর বা কালো বর্ণ ধারণ করে।
ঝড় বা প্রবল বজ্রপাতের সময় মূলত আকাশের ধূসর বা কালো বর্ণের মেঘ দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে এসময় মেঘের পুরুত্ব অনেক বেশি থাকে।
তবে আপনি যদি কখনো বিমানে ভ্রমণ করে থাকেন এবং বিমানটি যদি মেঘের উপর দিয়ে যায় তাহলে মেঘের উপরের পৃষ্ঠটি দেখতে পাবেন যা সম্পূর্ণই সাদা। কারণ উপরের পৃষ্ঠটিতেই সবচেয়ে বেশি আলো পড়ে এবং বিক্ষেপণও বেশি ঘটে।
কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান |
0 মন্তব্যসমূহ
If it seems any informative mistake in the post, you are cordially welcome to suggest fixing it.