Arificial intelligence |
সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) সবচেয়ে বিপ্লবী প্রযুক্তিগুলির মধ্যে একটি। AI প্রযুক্তি বিশ্বকে পরিবর্তন করার মত ক্ষমতা রাখে। স্বয়ংক্রিয় গাড়ি থেকে ভার্চুয়াল সহকারী পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে AI আমাদের জীবনকে আরও সহজ এবং আরও দক্ষ করে তুলেছে। তবে এ আই এর ধারণা এবং সমাজের জন্য এর প্রভাবকে ঘিরে এখনও অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। তাই আজকে আমরা এই পোস্টে AI এর মূল বিষয়গুলি অন্বেষণ করব এবং এটি কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি একজন প্রযুক্তি প্রেমী হয়ে থাকলে এই নিবন্ধটি আপনাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ভবিষ্যত গঠনে এর ভূমিকা সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ধারণা প্রদান করবে।
AI (Artificial intelligence) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা AI নামেও পরিচিত, যা কম্পিউটার সিস্টেমের একটি আপগ্রেডেট সংস্করণকে বোঝায়। এটি সাধারণত মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয় এমন কাজগুলি সম্পাদন করতে পারে। এসব কাজের মধ্যে যেমন রয়েছে ইনপুট করা তথ্য উপলব্ধি বা বিশ্লেষণ, তেমনি রয়েছে এসকল বিশ্লেষণ থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ। মোট কথায়, মানুষ যেসব কাজ করে থাকে তার অধিকাংশই ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আয়ত্ত্ব করে নিচ্ছে।
মূলত AI এর দুটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে।
- Narrow বা Weak AI এবং
- General AI
Narrow বা Weak AI
Narrow বা Weak AI কে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে পারে। যেমন চিত্র বা ছবি অনুধাবন করা বা চিনতে পারা কিংবা প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি। মূলত আধুনিক সময়ের সমস্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার গুলো Narrow AI এর অন্তর্ভুক্ত। এই AI এর কিছু উল্ল্যেখযোগ্য ব্যাবহার হল-
১. ইমেজ এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম
ফটোগ্রাফে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চেহারা শনাক্ত করার জন্য ফেসবুক এবং গুগলের মতো সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো Narrow AI ব্যবহার করে থাকে।
২. চ্যাটবট এবং Conversational Assistant
এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় ভার্চুয়াল সহকারী Google Assistant, Siri এবং Alexa।
৩. স্ব-চালিত যানবাহন
স্ব-চালিত যানবাহন যেমন টেসলার কিছু মডেল Narrow এআই-এর উল্ল্যেখযোগ্য উদাহরণ।
General AI
অন্যদিকে General AI, একজন মানুষ করতে পারে এমন যেকোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ সম্পাদন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। General AI অত্যন্ত জটিল হলেও এটি স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনীতি এবং পরিবহনের মতো শিল্পে বিপ্লব বয়ে আনছে। তবে এই ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে আছি। বলতে গেলে তখনই এই AI সিস্টেম সম্ভব হবে যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মত আবেগ, অনুভূতি বা অন্যান্য মানবিক গুনাবলি আয়ত্ব করতে পারবে।
AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে কাজ করে?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হল একটি দ্রুত বিকশিত প্রযুক্তি যা আমাদের জীবনযাপন এবং কাজের পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসছে। এর মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল এমন একটি কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি করা যা এমন কাজগুলি সম্পাদন করতে পারে যা সাধারণত মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয়। তবে এই উদ্দ্যেশ্যে পূরণ করা যথেষ্টই কষ্টসাধ্য ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে। বছরের পর বছর লেগে থেকে বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তিকে ক্রমশ উন্নত করার চেষ্টা করে আসছেন। কিন্তু এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই আসলে কীভাবে কাজ করে?
এআই সিস্টেমগুলি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করার জন্য অ্যালগরিদম এবং পরিসংখ্যানগত মডেলের একটি সেটের উপর নির্ভর করে। এই অ্যালগরিদমগুলি অতিবৃহৎ ডেটাসেট থেকে বিশ্লেষণ এবং তা থেকে শেখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা এআই সিস্টেমকে অনুরুপ প্যাটার্ন সনাক্ত করতে এবং সেই ডেটার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সাহায্য করে। সিস্টেমের যত বেশি ডেটা অ্যাক্সেস করা যায়, সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী বা আউটপুট বের করার ক্ষেত্রে এটি তত ভাল হয়। AI এর মূল উপাদানের মধ্যে একটি হল মেশিন লার্নিং, যা মেশিনকে ডেটা থেকে শেখার জন্য ব্যাবহৃত হয়। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম এআই সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়, যা তাদেরকে সময়ের সাথে সাথে শিখতে এবং মানিয়ে নিতে শেখায়। এর মানে হল যে AI সিস্টেমগুলি তাদের কর্মক্ষমতা এবং নির্ভুলতা উন্নত করতে পারে কারণ তারা আরও বেশি ডেটার সংস্পর্শে আসে।
যেমন ধরুন আপনাকে বলা হল এমন একটি পরিসংখ্যান তৈরি করতে যা থেকে আপনি সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমার নাম বের করতে পারবেন। কিন্তু আপনাকে বলা হল এর জন্য আপনাকে জনে জনে উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। তাহলে আপনি যদি দশ জন মানুষের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছান তাহলে যে ফলাফল পাবেন দশ হাজার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়ে অবশ্যই কম সঠিক হবে। অর্থাৎ, যত বেশি মানুষের মতামত আপনি গ্রহণ করবেন তত বেশি আপনার ফলাফলটি এক্যুরেট হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও ঠিক একই ভাবে কাজ করে। এটি যত বেশি সম্ভব ডেটা বা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সেসব বিশ্লেষণ করে আপনাকে তত বেশি সঠিক উত্তরটি প্রদান করে। তবে এই উদাহরণটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি প্রাথমিক দিক প্রকাশ করে মাত্র। কারণ এ ছাড়াও এটি আরো অনেক বিষয়ে পারদর্শী।
AI এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ-NLP। এনএলপি কম্পিউটারকে মানুষের ভাষা বুঝতে এবং ব্যাখ্যা করতে শেখায়, যা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন যেমন চ্যাটবট, ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট এবং ভাষা অনুবাদ সফ্টওয়্যারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এআই মূলত Deep Learning এর নির্ভর করে। এটি মেশিন লার্নিংয়ের একটি উন্নত রূপ যা মানুষের মস্তিষ্ককে অনুকরণ করতে নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। ডিপ লার্নিং অ্যালগরিদম এআই সিস্টেমগুলোকে জটিল ডেটা সেট বিশ্লেষণ করতে দেয়, যেমন ছবি বা ভিডিও, এবং তাদের মধ্যে বিভিন্ন নিদর্শন, চিহ্ন এবং বস্তু সনাক্ত করতে সাহায্য করে। এভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজেকে ক্রমশ উন্নত করতে আর যে কোন ইনপুট প্রয়োগে এই অর্জিত ডেটা বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত আউটপুট প্রদান করতে সক্ষম হয়।
এ আই এর কাজ ভালভাবে বোঝার জন্য আমরা ছোট্ট একটি উদাহরণ বিবেচনা করতে পারি যেখানে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার খুবই প্রাথমিক একটি উদাহরন দেখতে পারব আমরা। আইফোনের সিরি বা এমাজনের এলেক্সা সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। ব্যাবহারকারীর কমান্ড বা আদেশ এর উপর ভিত্তি করে এটি আউটপুট প্রদান করে থাকে। যেমন আপনি যদি সিরি বা এলেক্সা কে একটি গানের লিরিক্স উল্ল্যেখ করে সেটি প্লে করতে বলেন, এটি ঠিকই আপনার পছন্দের গান টি সার্চ করে প্লে করবে। অর্থ্যাৎ আপনার কমান্ড দেওয়ায় ছাড়া আর কোন কাজই করতে হল না, যা করার সিরি বা এলেক্সা নিজেই করে দিল। আপনার কথা ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে কথাটি বুঝতে পারা, সে অনুযায়ী অসংখ্য ফলাফলের মধ্য থেকে উপযুক্ত ফলাফলটি বের করা যা কি না প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার কাজ, সেটাই একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম করে দিচ্ছে।
টিভি সিনেমায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমরা অনেক কিছু দেখেছি বা জেনেছি। টার্মিনেটরের স্কাইনেট থেকে আয়রনম্যানের জার্ভিস, যা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি কেমন হতে পারে ভবিষ্যতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। হয়তো পুরোপুরি সে পর্যায়ে যেতে আমাদের এখনো অনেক বাকি, তবে সেটি আশীর্বাদ হবে নাকি অভিসাপ সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ
If it seems any informative mistake in the post, you are cordially welcome to suggest fixing it.